জ্ঞান ও শিষ্টাচারের সাতকাহন
হুট করে রেগে যাওয়া কিংবা কারও সাথে খারাপ ব্যবহার করা কখনোই উচিত নয়। প্রকৃত জ্ঞানী ব্যক্তি কারও সাথে কখনোই খারাপ ব্যবহার করতে পারে না। জ্ঞান যতো অর্জিত হয় মানুষ ততো জ্ঞানের বিশালতায় নিজেকে হারিয়ে ফেলে। ফলে সে নিজের ক্ষুদ্রতা উপলব্ধি করতে পারে।
জ্ঞানী ব্যক্তি বিনয়ী হবেন, এটাই স্বাভাবিক। একজন শিক্ষকের কাছে মানুষ এটাই আশা করে। ফলে কোনো শিক্ষক খারাপ কাজ করলে সবাই অবাক হয়। ঠিক তেমনি প্রত্যেকটা মানুষ নিজ নিজ ক্ষেত্রে জ্ঞানী। ফলে সবারই উচিত ভালো ব্যবহার করা, অহংকারকে এড়িয়ে চলা।
ইসলামি দার্শনিক আবু তাহের মিসবাহ বলেন, ‘গাছের যে ডালে ফল ধরে সে ডাল ফলের ভারে ঝুঁকে অবনত থাকে, আর যে ডালে ফল নেই সে ডাল মাথা উঁচিয়ে থাকে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। এটাই চিরন্তন সত্য। মানব সমাজেও এ সত্যের প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই। যিনি যত বড় জ্ঞানী যত বড় গুণী তিনি তত বেশি বিনয়ী। পক্ষান্তরে যার জ্ঞানের পরিধি যত সঙ্কুচিত তার অহংকার তত বেশি স্ফীত।
প্রকৃত জ্ঞান মানুষের অন্তর্চক্ষু খুলে দেয়। জ্ঞান-সমুদ্রের বিশালতা তাকে হতবাক করে। নিজের জ্ঞানের ক্ষুদ্রতা তার সামনে প্রকাশিত হয়। ফলে সে বিনয়ে অবনত হয়। পক্ষান্তরে যার অন্তর্চক্ষুর সামনে থাকে মূর্খতার আবরণ, সে জানে না জ্ঞান-সমুদ্রের বিশালতার কথা। তাই সে অল্পতেই জ্ঞানের বড়াই করে, নিজেকে মহাজ্ঞানী ভেবে অহংকার করে।’
পৃথিবীর জ্ঞানের খুব অল্পই মানুষ অর্জন করতে পারে। কোনো মানুষই ‘সবজান্তা’ হয়ে ওঠতে পারে না। তাই জ্ঞান নিয়ে অহংকার করা ঠিক নয়। জ্ঞান নিয়ে অহংকার করা হলে সেই জ্ঞান দিয়ে কোনো ভালো হয় না। আর নিজের সীমিত জ্ঞান নিয়ে নিরহংকার হলে মানুষের কাছে তাঁর সম্মান বাড়ে।
ইসলামের অপর দার্শনিক ইমাম শা’বী (রহ.) বলেন,
‘জ্ঞানের তিনটি স্তর আছে; যে ব্যক্তি জ্ঞানের প্রথম স্তর অর্জন করে তার নাক উঁচু হয়ে যায়, এবং মনে করে যে সে জ্ঞান অর্জন করে ফেলেছে।
আর যে ব্যক্তি জ্ঞানের দ্বিতীয় স্তর অর্জন করে সে নিজেকে ছোট মনে করতে শুরু করে, এবং বুঝতে পারে যে তার জ্ঞান অর্জিত হয় নি।
আর তৃতীয় স্তর হলো শুধু আফসোস আর আফসোস! হায় হায়, জ্ঞান তো কখনোই অর্জন করা সম্ভব নয়।’
তথ্যসুত্র: ইন্টারনেট