ব্যবসার সুচনার জন্য দরকার সুদৃঢ় মনোবল
অন্যান্য কাজের পাশাপাশি ব্যবসা করা সকলের কর্ম নয়। সত্যি কথা বলতে এটি খুবই কঠিন। অনেকে শুধু ব্যবসা নিয়ে পড়ে থেকেও উন্নতি করতে পারে না সেখানে ব্যবসাকে পাশাপাশি হিসেবে রেখে সফলতা পাওয়া কতটা কঠিন তা একবার ভেবে দেখুন। যদিও এতোটা কাঠিন্য সত্ত্বেও কিছু ব্যক্তি একে তরলীকরণের উপায় বের করে ফেলেন এবং সফলও হন। তাদের কাছে কিন্তু আপনার মতই ২৪ ঘন্টায় দিন হয়। তাহলে কীভাবে পারেন তারা? হ্যাঁ, তারা পারেন কারণ তারা একটি নির্দিষ্ট মানসিকতা নিয়ে সবকিছুকে তৈরি করে থাকেন।
এখানে এমন ৮টি মানসিকতার কথা বলা হল যেগুলো ঐ সফল মানুষেরা নিয়ে থাকেন।
১। ভাবনার শেষ থেকেই শুরু করুন, ভাবনাটাকে স্বচ্ছ করুন নিজের কাছে।
৯৯ শতাংশ ব্যক্তির ব্যর্থতার পিছনে এই মানসিকতারই অভাব দেখা যায়। ভাবনার শেষ থেকে শুরু করুন। আপনি আপনার এই সাইড বিজনেস থেকে আসলে কি চাচ্ছেন? অতিরিক্ত মুনাফা? স্বাধীনতা? নাকি চাকুরি ছেড়ে দেবার জন্য? একেবারে শেষ প্রশ্নের একেবারে গভীরে প্রবেশ করুন।
ধরুন আপনি চাচ্ছেন পরবর্তী তিন বছরে ২০০,০০০ টাকা সৃষ্টি করতে এবং এর পর আপনি আর চাকুরি করবেন না এবং বিশ্বভ্রমণে বের হবেন। প্রতিদিন স্মরণ করুন এই বিষয়টি। চাইলে আপনার ডেস্কে লিখে রাখতে পারেন প্রতিমুহূর্তে আপনাকে আপনার লক্ষ্যকে আপনার সামনে তুলে ধরার জন্য।
২। ৯০ শতাংশ প্রস্তুত হলেই শুরু করে দিন।
আমরা সবকিছুতেই নিখুঁত হবার বৃথা চেষ্টা করে থাকি। একটা বিষয় খেয়াল করলে দেখবেন যে শেষ ১০ শতাংশ কাজেই সবথেকে বেশি সময় লাগিয়ে ফেলি যদিও সেটার সার্বিকভাবে আলাদা কোনো ফল পাওয়া যায় না। তাহলে কী করা উচিত আমাদের?
নিখুঁত করাকে লক্ষ্য হিসেবে না নিয়ে ৯০ শতাংশ তৈরি হলেই ব্যবসাটা শুরু করে দিন। কবে আপনার পণ্য সম্পূর্ণ তৈরি হবে বা কবে পেজ ফরম্যাটিং ঠিকঠাক হবে সে আশায় বসে না থেকে বরং শুরু করে দিন এবং এরপর পরিবর্তন বা নিখুঁত করার কাজ চালিয়ে যান।
৩। সময় ব্যবস্থাপনা এবং উৎপাদনশীলতার দিকে বেশি নজর দিন।
আব্রাহাম লিঙ্কন খুব সুন্দর একটি কথা বলে গেছেন, “ একটি গাছ কাটার জন্য আমাকে যদি ছয় ঘণ্টা সময় দেয়া হয়, আমি প্রথম চার ঘণ্টা কুড়াল ধার দিতে ব্যয় করব।” ধরুন প্রতিদিন ব্যবসার জন্য আপনার ৩ ঘণ্টা বা এর চেয়েও কম সময় থাকে। এক্ষেত্রে আপনাকে জানতে হবে এইটুকু সময়ের প্রতিটি মিনিটকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়। আর এজন্যই আপনাকে উৎপাদনশীলতা এবং সময় ব্যবস্থাপনার উপর জোর দিতে হবে। তবে হ্যাঁ, একদিনেই এটিকে আয়ত্ত করা সম্ভব নয়। অভিজ্ঞদের পরামর্শও এক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
৪। অবসরের প্রতিটি মুহূর্ত আপনার জন্য সুযোগ।
শুধু দিনের শেষে প্রাপ্ত সময়টুকুই নয়, বিভিন্ন কাজের ফাঁকে প্রাপ্ত সময়কেও কাজে লাগান। যেমন ধরুন আপনি পড়াশোনার পাশাপাশি বযবসা করছেন। আপনার জন্য ক্লাসের ফাঁকে পাওয়া সময়টাও অবসর। এ অবসরে আপনি প্রয়োজনীয়বই পড়তে পারেন, ব্যবসায়িক ফোনালাপ সারতে পারেন অথবা আপনার ব্যবসায় কাজে লাগতে পারে এমন কোনো ভালো প্রবন্ধ পড়তে পারেন। এভাবে যদি করতে পারেন আপনি প্রতি সপ্তাহে অতিরিক্ত ১০ ঘণ্টা সময় আপনি ব্যবসার জন্য পেতে পারেন।
৫। শিক্ষণ সময়কে অর্ধেক করে ফেলুন।ব্যবসার ক্ষেত্রে সবাই শুধু বলতে শুনবেন কাস্টমার সম্পর্কে শিখুন, উৎপাদনশীলতা সম্পর্কে শিখুন এবং তথ্য সংগ্রহ করতে থাকুন। এটা অবশ্যই খুব ভাল কথা। কিন্তু কথা হলো এতো শিক্ষা কাজে করে দেখাবেন কখন?
বিভিন্ন মার্কেটিং মাধ্যমগুলো থেকে আপনি অনেক কিছুই শিখতে পারেন। কিন্তু সেগুলো থেকে যদি লাভবান না হন তাহলে সে শিক্ষা আপনার জন্য সময় অপচয় ব্যতীত আর কিছুই নয়। অবশ্যই খেয়াল রাখবেন ব্যবসার জন্য আপনার সময় খুবই কম এবং সেই সময়ে শুধু জ্ঞান আহরণ আপনার কাজ নয়। আপনার কাজ হলো কিভাবে আপনার ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন সেটা। তাই সময়কে শুধু শেখার পেছনে না লাগিয়ে অন্তত ৯০ শতাংশ সময় কাজের পিছনে ব্যয় করুন।
৬। নিজেকে ভুলে যাবেন না।
একজন ছাত্রের কথা একটু উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরছি। সে পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবসা করতো। এক সেমিস্টারে পড়াশোনার চাপ খুব বেড়ে যায় এবং একই সাথে ক্লায়েন্টের চাহিদাও বেড়ে যায়। পুরো একটা সপ্তাহে সে হতবিহ্বল হয়ে যায় কী করবে, কোনটা করবে। ফলাফল ছিল অর্ডার এর ডেডলাইন ফসকে যাওয়া, ক্লায়েন্ট হারানো, পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হওয়া,সর্বোপরি বিষন্নতায় ভোগা। এই সবকিছুর মূলে রয়েছে নিজেকে ভুলে যাওয়া কেননা এই সময়ে সে সবার থেকে আলাদা হয়ে পড়েছিল এমনকি নিজের জন্য সামান্য সময়টুকুও ছিল না।
নিজেকে ভুলে যাবেন না। সবকিছু করছেন তো আপনারই জন্য। নিজেকে প্রতি সপ্তাহে কিছু ছোটখাটো উপহার দিন, আর প্রতিটি মাইলস্টোন পেরিয়ে বড় কিছু। উপহারটা হতে পারে কিছুটা অবসর সময়, বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া বা ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি।
৭। শারীরিক পরিশ্রম করুন।
বিষন্নতাকে কাটিয়ে উঠতে এবং এড়িয়ে চলতে শারীরিক পরিশ্রম খুবই জরুরী। এটা হতে পারে ৩০ মিনিটের হাঁটা বা জিমে যাওয়া। এর পিছনে প্রধার কারণ অনেকটা বৈজ্ঞানিক। আপনি যখন শারীরিক কসরতের কাজ করবেন অনেক কাজের চাপেও, তা আপনার মস্তিস্কে এমন একটি হরমোন নিঃসরণ করতে সাহায্য করে যা আপনাকে আনন্দের অনুভূতির যোগান দেবে।
৮। এটাকে শুধুই সাইড বিজনেস নয়, এটাকেই সর্বসমেত মনে করুন।
ব্যবসায় উন্নতি করতে আপনার এই মানসিকতাটা সবচেয়ে জরুরী। পাশাপাশি ব্যবসা করছেন না ভেবে ভাবুন আপনার পাশে ব্যবসাটা তৈরি করছেন। আপনাকে মাথায় রাখতে হবে আপনি সত্যিই একটা ব্যবসা করছেন। এটাকে সম্পূর্ণ মুল্যায়ন করুন।
ব্যবসা করতে গিয়ে অনেক বাধা আসবে। অনেকেই আপনাকে দমিয়ে দেবার চেষ্টা করবে।কিন্তু আপনার কাজ হবে লক্ষ্যে স্থির থাকা। যদিও এটা এতো সহজ কাজ নয়, কিন্তু যখন আপনি করতে পারবে তখন নিজেকে নিয়েই অনেক আনন্দিত হবেন। বাস্তবিক কার্যকর পদেক্ষেপ দিয়ে ব্যবসা শুরু করে দিন। আপনিই পারবেন।
COMMENTS